বাসা-বাড়িতে বৈদ্যুতিক লাইন ব্যবহারের সময় সিস্টেমের নিরাপত্তার জন্য আমাদের যেই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়, সেটি হলো সার্কিট ব্রেকার।
এই আর্টিকেলে আমরা সার্কিট ব্রেকার কি, কিভাবে কাজ করে, কেন ব্যবহার করা হয় এবং সার্কিট ব্রেকারের দাম কত এইসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আলোচ্য বিষয়সমূহ
সার্কিট ব্রেকার কি
সার্কিট ব্রেকার হলো একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র, যা বৈদ্যুতিক সার্কিটকে ওভারলোড বা শর্ট সার্কিটের মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। সাধারণত, সার্কিটে যখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় বা শর্ট সার্কিট ঘটে তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
এর ফলে, বাসা-বাড়ির যান্ত্রিক ডিভাইস এবং ভবনের বৈদ্যুতিক সিস্টেম অনাকাঙ্খিত বিপদের হাত থেকে সুরক্ষা পায়। যার কারণে এই সার্কিট ব্রেকারগুলোকে অনেক সময় রক্ষণযন্ত্রও বলা হয়।
সার্কিট ব্রেকার কেন ব্যবহার করা হয়
আমাদের বাসা-বাড়ি, অফিস এবং কল-কারখানাগুলোকে, বিভিন্ন দূর্ঘটনা ও অনাকাঙ্খিত বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যেমনিভাবে সিকিউরিটি গার্ড অথবা সিসি টিভি ব্যবহার করা হয়।
ঠিক একইভাবে বাসা-বাড়ির ইলেকট্রিসিটি, ইলেকট্রিক্যাল ওয়ারিং, এবং বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিকে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা থেকে নিরাপদে রাখার জন্য সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ
- অতিরিক্ত প্রবাহ থেকে প্রোটেকশনঃ সার্কিট ব্রেকার অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক প্রবাহ (ওভারকারেন্ট) থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করে। যদি সিস্টেমে বিদ্যুতের অতিরিক্ত প্রবাহ দেখা যায় তাহলে সার্কিট ব্রেকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্কিটটি বন্ধ করে দেয়।
- ওভারলোড থেকে প্রোটেকশনঃ সিস্টেমে অনেক বেশি লোড বা ডিভাইস সংযুক্ত হলে ওভারলোডিং হতে পারে। সার্কিট ব্রেকার এই অবস্থায় সিস্টেমকে বন্ধ করে দেয়, যাতে বৈদ্যুতিক সিস্টেম ও ডিভাইসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
- শর্ট সার্কিট থেকে প্রোটেকশনঃ শর্ট সার্কিট হলে বৈদ্যুতিক লাইনে অনেক বেশি পরিমাণ প্রবাহের সৃষ্ট হয়, যা সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে। সার্কিট ব্রেকার শর্ট সার্কিটের সময় সার্কিটটি বিচ্ছিন্ন করে সিস্টেমকে রক্ষা করে।
- লিকেজ কারেন্ট থেকে প্রোটেকশনঃ সিস্টেমকে লিকেজ কারেন্ট থেকে রক্ষার জন্য একটি বিশেষ ধরণের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয়, যাকে আরসিসিবি বা আরসিডি বলা হয়। এটি লিকেজ কারেন্ট শনাক্ত করে বৈদ্যুতিক শক ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং মাটির সাথে সংযোগের ত্রুটি সনাক্ত করে দ্রুত সার্কিট বন্ধ করে দেয়।
সার্কিট ব্রেকার কিভাবে কাজ করে
1. শর্ট সার্কিটের ক্ষেত্রেঃ যখন একটি ফেজ (লাল) এবং নিউট্রাল (কালো) তার তাদের রেজিস্ট্যান্স মাধ্যম বাদ দিয়ে একখানে হয়ে যায় তখন সেটিকে শর্ট সার্কিট বলা হয়।
কোনো কারনে যদি বৈদ্যুতিক লাইনে শর্ট সার্কিট হয় তাহলে সেই লাইন দিয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।
আর এই শর্ট সার্কিটের কারণে সৃষ্ট উচ্চ কারেন্ট সার্কিট ব্রেকারের একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটকে সক্রিয় করে, যা একটি প্লাঙ্গারকে টেনে আনে এবং সার্কিটটি বন্ধ করে দেয়। ফলে সিস্টেম দূর্ঘটনা থকে রক্ষা পায়।
2. ওভারলোডের ক্ষেত্রেঃ আপনি লোড অনুযায়ী যত অ্যাম্পিয়ারের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করবেন সার্কিট ব্রেকার দিয়ে যদি তার চেয়ে বেশি অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, তখন সেটিকে ওভারলোড বলা হয়।
এক্ষেত্রে আপনার বৈদ্যুতিক সংযোগে যদি সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা হয় তাহলে এই পরিস্থিতে সার্কিট ব্রেকারটির একটি বাইমেটালিক স্ট্রিপ গরম হয়ে বাঁকা হয়, যা সার্কিট বন্ধ করে দেয়।
3. লিকেজ কারেন্টের ক্ষেত্রেঃ বর্তমানে কিছু অত্যাধুনিক সার্কিট ব্রেকার রয়েছে, যেগুলো শর্ট সার্কিট এবং ওভারলোডের পাশাপাশি লিকেজ কারেন্ট থেকেও সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখে। উদাহরণস্বরূপঃ আরসিসিবি (RCCB)।
সাধারণত একটি আরসিসিবি সার্কিট ব্রেকারে সর্বনিম্ন দুটি পোল থাকে। যার একটি ফেজ হচ্ছে এবং আরেকটি নিউট্রাল।
আপনি যদি একটি ৩০ অ্যাম্পিয়ারের আরসিসিবি সার্কিট ব্রেকার সংযোগ করেন তাহলে আপনার ফেজ এবং নিউট্রাল উভয় তার দিয়েই ৩০ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি সিস্টেমের কোনো ডিভাইসের বডি কারেন্ট হয়ে যায় তাহলে তখন সেই বডি দিয়েও কিছু কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
ফলে নিউট্রালে তখন পূর্ণ ৩০ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট না পেয়ে এর থেকে কম কারেন্ট পাওয়া যায়। আর ফেজ এবং নিউট্রালের মধ্যে বিদ্যুতের এরকম ভারসাম্যহীনতা ঘটলে, আরসিসিবি সার্কিট ব্রেকারটি ট্রিপ করে বিদ্যুতের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।
সার্কিট ব্রেকার কত প্রকার
সার্কিট ব্রেকার বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যেখানে প্রতিটি প্রকারের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও কার্যকারিতা রয়েছে। নিচে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এমন কিছু সার্কিট ব্রেকার নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার (MCB): ছোটখাটো ওভারলোড এবং শর্ট সার্কিট থেকে রক্ষা করে। সাধারণত বাড়ি এবং ছোট অফিসে ব্যবহৃত হয়।
- মোল্ডেড কেস সার্কিট ব্রেকার (MCCB): বড় ধরণের ওভারলোড ও শর্ট সার্কিট থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি বড় ভবন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।
- এয়ার সার্কিট ব্রেকার (ACB): উচ্চ ভোল্টেজের কারেন্ট থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। সাধারণত বড় ইন্ডাস্ট্রি এবং বাণিজ্যিক স্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।
- ভ্যাকুয়াম সার্কিট ব্রেকার (VCB): ভ্যাকুয়াম প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরক নেভায়। যা পাওয়ার গ্রিডের মতো উচ্চ ভোল্টেজের অ্যাপ্লিকেশনে ব্যবহৃত হয়।
- রেসিডুয়াল কারেন্ট সার্কিট ব্রেকার (RCCB): আর্থ ফল্ট এবং লিকেজ কারেন্ট শনাক্ত করে বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়ি এবং অফিসে ব্যবহৃত হয়।
সার্কিট ব্রেকারের দাম কত
প্রধানত দুটি জিনিসের উপর নির্ভর করে সার্কিট ব্রেকারের দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যথাঃ
- ব্রান্ডভেদে
- প্রকারভেদে
নিচে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্রান্ডগুলোর MCB, MCCB এবং RCCB সহ বিভিন্ন প্রকারের সার্কিট ব্রেকার এর দাম তুলে ধরা হলোঃ
সুপার স্টার সার্কিট ব্রেকার দাম
ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের জন্য বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি কোম্পানি হচ্ছে সুপারস্টার। তবে, বর্তমানে সুপারস্টারের শুধুমাত্র MCB সার্কিট ব্রেকার রয়েছে।
MCB সার্কিট ব্রেকারগুলো মূলত তিনটি পোলের হয়ে থাকে। যথাঃ সিঙ্গেল পোল, ডাবল পোল এবং ত্রিপল পোল। নিচে সুপারস্টার সার্কিট ব্রেকারের দাম তুলে ধরা হলোঃ
পোল সংখ্যা | অ্যাম্পিয়ার | দাম |
---|---|---|
সিঙ্গেল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫ | ২৭০ টাকা |
৩২, ৪০, ৬৩ | ২৯৭ টাকা | |
ডাবল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫ | ৫২২ টাকা |
৩২, ৪০, ৫০, ৬৩ | ৫৯৭ টাকা | |
ট্রিপল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫ | ৭৮৩ টাকা |
৩২, ৪০, ৫০, ৬৩ | ৮৪৪ টাকা |
আরো পড়ুনঃ ফ্যান রেগুলেটরের দাম
ক্লিক সার্কিট ব্রেকার দাম
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কোম্পানি প্রাণ-আরএফএল এর একটি ব্রান্ড হচ্ছে ক্লিক।
বর্তমানে ক্লিকের MCB এবং MCCB এই দুই ধরনের সার্কিট ব্রেকার রয়েছে। নিচে সেই সার্কিট ব্রেকারগুলোর দাম তুলে ধরা হলোঃ
সার্কিট ব্রেকারের প্রকার ও পোল সংখ্যা | অ্যাম্পিয়ার | দাম |
---|---|---|
MCB সিঙ্গেল পোল | ১৬, ২০, ২৫ | ২২৪ টাকা |
৩২, ৪০ | ২০৪ টাকা | |
৫০, ৬৩ | ২৩২ | |
MCB ডাবল পোল | ৬, ১০, ২৫ | ৪০৪ টাকা |
MCB ট্রিপল পোল | ৬, ১০, ১৬, ২৫, ৩২, ৪০, ৫০ | ৫৮৮ টাকা |
MCCB ট্রিপল পোল | ৩২, ৪০ | ৩,৪০০ টাকা |
৫০, ৬৩ | ৪,২৫০ টাকা | |
৮০ | ৪,৪১৫ টাকা | |
১০০ | ৫,৫০০ টাকা | |
১২৫ | ৬,৯১৫ টাকা | |
১৬০ | ৭,৫৮৫ টাকা | |
২০০ | ৯,৮৩৫ টাকা |
আরো পড়ুনঃ সোলার চার্জ কন্ট্রোলারের দাম
ওয়ালটন সার্কিট ব্রেকার দাম
ওয়ালটনের সার্কিট ব্রেকারগুলো মূলত MCB সার্কিট ব্রেকার। নিচে ওয়ালটন MCB সার্কিট ব্রেকারের দাম তুলে ধরা হলোঃ
পোল সংখ্যা | অ্যাম্পিয়ার | দাম |
---|---|---|
সিঙ্গেল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩২ | ২২৫ টাকা |
৪০, ৫০, ৬৩ | ২৪৫ টাকা | |
ডাবল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩২ | ৪৫০ টাকা |
৪০, ৫০, ৬৩ | ৪৯০ টাকা | |
ট্রিপল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩২, | ৬৭৫ টাকা |
৪০, ৫০, ৬৩ | ৭৩৫ টাকা |
ABB সার্কিট ব্রেকার দাম
ABB কোম্পানির সার্কিট ব্রেকারগুলো মানে এবং টেকসইয়ে অনেক উন্নত। যার কারনে ABB সার্কিট ব্রেকারের দাম অন্যান্য কোম্পানিগুলোর তুলনায় কিছুটা বেশি হয়।
নিচে ABB কোম্পানির MCB সার্কিট ব্রেকার এর দাম তুলে ধরা হলোঃ
পোল সংখ্যা | অ্যাম্পিয়ার | দাম |
---|---|---|
সিঙ্গেল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩২, ৪০ | ৪৯০ টাকা |
৫০, ৬৩ | ১,৩৫০ টাকা | |
ডাবল | ৬, ১৬, ২০, ২৫, ৩২, ৪০ | ১,৬৫০ টাকা |
৫০, ৬৩ | ৩,৬০০ টাকা | |
ট্রিপল | ৬, ১৬, ২০, ২৫, ৩২, ৪০ | ২,৮৫০ টাকা |
৫০, ৬৩ | ৫,৮১২ টাকা |
এনার্জিপ্যাক সার্কিট ব্রেকার মূল্য তালিকা
বর্তমানে এনার্জিপ্যাকের চার ধরনের সার্কিট ব্রেকার রয়েছে। যার একটি হচ্ছে MCB, MCCB, RCCB এবং ACB।
নিচে এনার্জিপ্যাকের Legrand MCB, MCCB, RCCB এবং ACB সার্কিট ব্রেকারের দাম তুলে ধরা হলোঃ
সার্কিট ব্রেকারের প্রকার ও পোল সংখ্যা | অ্যাম্পিয়ার | দাম |
---|---|---|
MCB সিঙ্গেল পোল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩২, ৪০ | ৩৬০ টাকা |
৫০, ৬৩ | ৫৪০ টাকা | |
MCB ডাবল পোল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩২, ৪০ | ১,০১০ টাকা |
৫০, ৬৩ | ১,৪৩০ টাকা | |
MCB ত্রিপল পোল | ৬, ১০, ১৬, ২০, ২৫, ৩২, ৪০ | ১,৭০৫ টাকা |
৫০ | ১,৮০০ টাকা | |
৬৩ | ২,৩৬৫ টাকা | |
MCCB ত্রিপল পোল | ২৫, ৪০, ৬৩, ১০০ | ৭,৭০০ টাকা |
১২৫ | ৯,৬৮০ টাকা | |
RCCB ডাবল পোল | ১৬, ২৫, ৩২, ৪০ | ১,২০০ টাকা |
৬৩ | ১,৩০০ টাকা | |
RCCB ট্রিপল পোল | ৬৩ | ২,০৩৫ টাকা |
ACB ত্রিপল পোল | ১০০০ | ১৬২,৮০০ টাকা |
১২৫০ | ১৬৫,০০০ টাকা | |
১৬০০ | ১৬৭,০০০ টাকা | |
২০০০ | ১৭০,০০০ টাকা | |
২৫০০ | ২৫৮,০০০ টাকা | |
৩২০০ | ৩৩০,০০০ টাকা | |
৪০০০ | ৪২৫,০০০ টাকা |
আরো পড়ুনঃ ১২ ভোল্ট ব্যাটারির চার্জারের দাম
সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন
সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করতে হয়। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে একটি সঠিক এবং পারফেক্ট সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করা সহজ হয়ঃ
1. লোডের ধরন এবং ক্ষমতা নির্ধারণ করুন
- লোডের ধরনঃ রেসিডেন্সিয়াল, কমার্শিয়াল, অথবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোড অনুযায়ী সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করুন।
- লোডের ক্ষমতাঃ লোডের মোট ক্ষমতা (ওয়াট বা কিলোওয়াট) হিসাব করে সার্কিট ব্রেকারের অ্যাম্পিয়ার রেটিং নির্ধারণ করুন।
2. ভোল্টেজ এবং ফ্রিকোয়েন্সি নির্ধারণ করুন
- ভোল্টেজ রেটিংঃ সার্কিট ব্রেকার অবশ্যই আপনার সিস্টেমের ভোল্টেজ রেটিং-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
- ফ্রিকোয়েন্সিঃ আপনার সিস্টেমের ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী ৫০হার্টজ বা ৬০হার্টজ এর সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করুন।
3. সার্কিট ব্রেকারের প্রকার নির্ধারণ করুন
সার্কিট ব্রেকারটি কোথায় এবং কেন ব্যবহার করবেন সে অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট প্রকারের সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করুন। যেমনঃ
- MCB: ছোট লোডের জন্য ব্যবহার হয়।
- MCCB: বড় লোড বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাপ্লিকেশন-এর জন্য ব্যবহার হয়।
- RCCB: ইলেকট্রিক শক প্রতিরোধের জন্য ব্যবহার হয়।
- ELCB: আর্থ লিকেজের জন্য ব্যবহৃত হয়।
4. সার্কিট ব্রেকারের ট্রিপিং কার্ভ নির্ধারণ করুন
- B, C, D, K, Z কার্ভঃ সার্কিট ব্রেকারে বিভিন্ন লোডের জন্য বিভিন্ন প্রকারের ট্রিপিং কার্ভ রয়েছে। সাধারণত রেসিডেন্সিয়াল লোডের জন্য B কার্ভ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল লোডের জন্য C বা D কার্ভ ব্যবহার করা হয়।
5. সার্কিট ব্রেকারের ব্রেকিং ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করুন
- Breaking Capacity: সার্কিট ব্রেকারের সর্বাধিক করেন্ট সহ্য করার ক্ষমতা। এটিকে সাধারণত কিলোঅ্যাম্পিয়ার (kA)-এ পরিমাপ করা হয়।
6. সার্কিট ব্রেকারের ব্র্যান্ড এবং গুণমান যাচাই করুন
ব্র্যান্ডঃ বিশ্বস্ত এবং মানসম্পন্ন ব্র্যান্ডের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করার চেস্টা করুন।
সার্টিফিকেশনঃ সার্কিট ব্রেকার আন্তর্জাতিক মান (IEC, UL) অনুযায়ী সার্টিফাইড কিনা তা ভালোভাবে নিশ্চিত করুন।
ওয়ারেন্টিঃ ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে সমাধানের জন্য ওয়ারেন্টিযুক্ত সার্কিট ব্রেকার কিনুন।
আরো পড়ুনঃ ফাস্ট চার্জার চেনার উপায়
সহজে বাসা-বাড়ির জন্য সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন
বাড়া-বাড়ির জন্য সার্কিট ব্রেকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে, আপনাকে আগে লোডের অ্যাম্পিয়ার নির্ধারণ করতে হবে। এরপর সে অনুযায়ী একটি সঠিক অ্যাম্পিয়ারের MCB সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করতে হবে।
লোডের অ্যাম্পিয়ার বের করার জন্য, আপনি যত ওয়াটের লোড ব্যবহার করেন তার সাথে বিদ্যুতের ভোল্টেজ (ভোল্ট) ভাগ দিতে হবে। (সাধারণত আমাদের দেশে বিদ্যুতের ভোল্টেজ ২২০-২৩০ ভোল্ট হয়ে থাকে)
- যদি আপনার লোড ৫ অ্যাম্পিয়ার হয়, তাহলে ৬ অ্যাম্পিয়ারের একটি সার্কিট ব্রেকার লাগাতে হবে। কারণ ৫ অ্যাম্পিয়ারের সার্কিট ব্রেকার পাওয়া যায় না।
- আর লোড যদি ১৮ অ্যাম্পিয়ার হয়, তাহলে ২০ অ্যাম্পিয়ারের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করতে হবে।
অর্থাৎ, আপনার লোডের মান থেকে পরবর্তী সর্বোচ্চ মানের সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করতে হবে।
উপরের নিয়মটি অনুসরণ করলে আপনার জন্য বাসা-বাড়ির জন্য সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করা অনেক সহজ হবে।
উপসংহার
সার্কিট ব্রেকার ক্রয় করার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের দাম, প্রকারভেদ এবং ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং সেগুলো যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কারন সঠিক তথ্য ও নির্দেশনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি একটি মানসম্পন্ন সার্কিট ব্রেকার নির্বাচন করতে সক্ষম হবেন, যা আপনার বৈদ্যুতিক সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখবে।
আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাকে সার্কিট ব্রেকার কেনার ক্ষেত্রে এবং যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
আর হ্যাঁ, সার্কিট ব্রেকার যেন সঠিকভাবে এবং নিরাপদে লাগানো হয় তার জন্য অবশ্যই পেশাদার ইলেকট্রিশিয়ান দ্বারা এটি সেটআপ করবেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
কোন কোম্পানির সার্কিট ব্রেকার সবচেয়ে ভালো?
বাংলাদেশি কোম্পানি হিসেবে সুপারস্টার, ক্লিক, ওয়ালটন এবং এনার্জিপ্যাকের সার্কিট ব্রেকার ভালো। আর আন্তর্জাতিক কোম্পানি হিসেবে Schneider Electric, Siemens, এবং ABB কোম্পানিগুলো যথেস্ট পরিমান ভালো।
বাসা বাড়িতে কোন ধরনের সার্কিট ব্যবহার করা হয়?
বাসা বাড়িতে মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার (MCB) ব্যবহার করা হয়।
সার্কিট ব্রেকার কত অ্যাম্পিয়ার হয়ে থাকে?
সার্কিট ব্রেকার সাধারণত ৬,১০,১৬,২০,২৫,৩২,৪০,৫০ এবং ৬৩ অ্যাম্পিয়ার হয়ে থাকে। তবে উচ্চ মানের সার্কিট ব্রেকারগুলোর অ্যাম্পিয়ার আরো বেশি হয়।
কোন ধরনের সার্কিট ব্রেকার আমার জন্য উপযুক্ত?
এটি নির্ভর করে আপনার প্রয়োজন এবং সার্কিটের ক্ষমতার উপর। ছোট ও মাঝারি আকারের সার্কিটের জন্য MCB, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সার্কিটের জন্য MCCB, এবং উচ্চ ভোল্টেজের জন্য ACB বা VCB ব্যবহার করা হয়।
সার্কিট ব্রেকার কি ম্যানুয়ালি চালু বা বন্ধ করা যায়?
হ্যাঁ, সার্কিট ব্রেকারকে ম্যানুয়ালি চালু অথবা বন্ধ করা যায়।
সার্কিট ব্রেকার কি ছোট ও বড় উভয় ধরনের সার্কিটে ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, সার্কিট ব্রেকারের বিভিন্ন প্রকারভেদ ছোট ও বড় উভয় ধরনের সার্কিটে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত MCB ছোট সার্কিটের জন্য এবং MCCB বড় সার্কিটের জন্য উপযুক্ত।
সার্কিট ব্রেকার কি নির্দিষ্ট ভোল্টেজের জন্য ডিজাইন করা হয়?
হ্যাঁ, সার্কিট ব্রেকার নির্দিষ্ট ভোল্টেজ এবং কারেন্ট রেটিং অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়। তাই, ব্যবহারের পূর্বে সার্কিট ব্রেকারের সঠিক রেটিং যাচাই করা উচিত।
সার্কিট ব্রেকার কি বিদ্যুতের খরচ কমায়?
সরাসরি নয়, কিন্তু সার্কিট ব্রেকার ওভারলোড এবং শর্ট সার্কিট থেকে রক্ষা করে, যা ডিভাইসের ক্ষতি কমিয়ে বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে সাহায্য করে। এর ফলে বিদ্যুতের খরচ কিছুটা কম হয়।
সার্কিট ব্রেকার কি ইনভার্টারের সাথে ব্যবহার করা যায়?
হ্যাঁ, সার্কিট ব্রেকার ইনভার্টারের সাথে ব্যবহার করা যায়। যা ইনভার্টার এবং সংযুক্ত ডিভাইসগুলিকে সুরক্ষা দেয়।
সার্কিট ব্রেকার কি ওভারহিটিং থেকে সুরক্ষা দেয়?
হ্যাঁ, কিছু সার্কিট ব্রেকার ওভারহিটিং থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। এগুলোতে থার্মাল প্রোটেকশন থাকে যা তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেলে সার্কিট বন্ধ করে দেয়।
সার্কিট ব্রেকার কি অটোমেটিক চালু হতে পারে?
সাধারণত অটো সার্কিট ব্রেকারগুলো বন্ধ হওয়ার পর পুনরায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়। তবে বেশিরভাগে ক্ষেত্রেই সার্কিট ব্রেকারগুলোকে ম্যানুয়ালি চালু করতে হয়।
সার্কিট ব্রেকার কখন পরিবর্তন করা উচিত?
যখন সার্কিট ব্রেকার স্বাভাবিক অবস্থায় কাজ করবে না কিংবা বারবার বন্ধ হয়ে যাবে অথবা কোনো দৃশ্যমান ত্রুটি দেখা যাবে, তখন সেটি পরিবর্তন করতে হবে।