পোস্ট কোড কি, কেন ব্যবহার করা হয় এবং পোস্ট কোড কিভাবে বের করবেন এবিষয়ে আলোচনা করব আজকের আর্টিকেলে।
তাই আপনি যদি আপনার এলাকার পোস্ট কোড বের করতে চান কিন্তু কিভাবে বের করতে হয় তা না জানেন, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য।
আলোচ্য বিষয়সমূহ
পোস্ট কোড কি?
পোস্ট কোড হচ্ছে এমন একটি ইউনিক সংখ্যা বা কোড, যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার পরিচিতি প্রদান করে। কেউ কেউ আবার এটিকে পোস্টাল কোড, জিপ কোড এবং পিন কোড বলে থাকে।
পোস্ট কোড কেন ব্যবহার করা হয়
মূলত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডাকযোগ ব্যবস্থাকে আরো নির্ভুল, সহজ এবং দ্রুততর করতে প্রতিটি ডাকঘর বা ইউনিয়নের ঠিকানার সাথে একটি পোস্ট যুক্ত করা হয়ে থাকে।
পোস্টাল কোডের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় বিভিন্ন চিঠি এবং পার্সেল প্রেরকের কাছ থেকে প্রাপকের সঠিক ঠিকানায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে।
কারণ, প্রতিটি পোস্ট কোড ইউনিক হওয়াতে চিঠিতে উল্লেখিত ঠিকানাটি সহজেই নিরূপণ করা যায় এবং সেই ঠিকানায় পোস্টটি পৌঁছে দিতেও সুবিধা হয়।
যার কারণে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য এবং সেবা গ্রাহকের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছানোর জন্য পোস্ট কোড ব্যবহার করে। এটি তাদের লজিস্টিক এবং ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমকে দ্রুত কার্যকর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পোস্ট কোড কিভাবে বের করবেন
অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমেই আপনারা পোস্ট কোড বের করতে পারবেন। তবে অফলাইনের ক্ষেত্রে আপনাদের একটি ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবে। কিন্তু অনলাইনের ক্ষেত্রে সেটির প্রয়োজন হবে না।
চলুন তাহলে এখন অফলাইনে এবং অনলাইনে কিভাবে নিজের অথবা যেকোনো এলাকার পোস্ট কোড বের করবেন তার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।
1. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে
পোস্ট কোড বের করার সবচেয়ে সহজ এবং নির্ভুল উপায় হচ্ছে ন্যাশনাল আইডি কার্ড। যেটিকে আমরা অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ভোটার আইডি কার্ড বলে থাকি।
আপনারা যারা আমার জিপ কোড কত বা পোস্টাল কোড কি? এই প্রশ্ন করে থাকেন তাদের জন্য এই পদ্ধতিটি বেশি কার্যকরী। কারন এই পদ্ধতিতে সরাসরি আপনার আইডি কার্ড থেকে পোস্ট কোড বের করতে পারবেন।
তো প্রথমেই আপনি আপনার নিজের অথবা পরিবারের যেকারোর একটি ন্যাশনাল আইডি কার্ড হাতে নিন। এরপর সেই কার্ডটির যেদিকে নাম এবং পরিচয় রয়েছে তার পেছনের দিকে লক্ষ্য করুন।
দেখবেন সেখানে আপনার এলাকার নাম এবং ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। আর তার পাশেই ডাকঘরের নামের পাশে একটি সংখ্যা দেখা যাচ্ছে।
মূলত এই সংখ্যাটিই হচ্ছে আপনার এলাকার অর্থাৎ ইউনিয়নের পোস্ট কোড নাম্বার।
2. গুগলে সার্চের মাধ্যমে
আপনার কাছে যদি এই মূহুর্তে ন্যাশনাল আইডি কার্ড না থাকে কিংবা আপনি বাসা থেকে দূরে কোথাও অবস্থান করেন তাহলে এক্ষেত্রে আপনার মোবাইল ফোনটি দিয়ে গুগলের সাহায্যে পোস্ট কোড বের করতে পারবেন।
এজন্য প্রথমে যেকোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করে গুগলে প্রবেশ করবেন। এরপর সার্চ বক্সে ইংরেজিতে আপনার ডাকঘরের নাম লিখে তার পাশে “Postcode” এই শব্দটি লিখবেন।
উদাহরণস্বরূপ: আমার ডাকঘর হচ্ছে ডিমলা। এক্ষেত্রে আমাকে লিখতে হবে Dimla Postcode.
এরপর সার্চ বাটনটিতে প্রেস করবেন। তাহলে নিচের মতো আপনার ডাকঘর এবং তার পাশে একটি সংখ্যা দেখতে পারবেন। এই সংখ্যাটিই হচ্ছে আপনার পোস্টাল কোড।
আর যদি ডাকঘরের নাম দিয়ে পোস্ট কোড শো না করে তাহলে আপনার উপজেলার নাম লিখে সার্চ দিবেন।
তবুও যদি পোস্ট কোড না আসে তাহলে নিচের পদ্ধতি দুটি ফলো করবেন।
3. বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পোস্ট কোড দেখার জন্য আমরা এখন যেই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করব সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের ডাক অধিদপ্তর বিভাগের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট।
মূলত এই ওয়েবসাইটটিতেই বাংলাদেশের সকল পোস্ট অফিসের পোস্টাল কোড অফিশিয়ালভাবে প্রকাশ করা রয়েছে।
তো, ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করার জন্য প্রথমে আপনারা বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তর এই লিংকে প্রবেশ করবেন। তাহলে সরাসরি পোস্ট কোড দেখার পেজে নিয়ে যাবে।
সেখানে আপনারা দেশের সকল জেলার নাম দেখতে পারবেন। সেগুলোর মধ্য থেকে আপনার জেলার নামের উপর ক্লিক করবেন।
তাহলে আপনার জেলাতে অবস্থিত সকল পোস্ট অফিসের নাম এবং তাদের পোস্ট কোড চলে আসবে।
সেখানে আপনার ডাকঘর অথবা উপজেলার নামের পাশে যেই কোডটি দেখতে পাবেন সেটি হচ্ছে আপনার পোস্ট কোড নম্বর।
4. পোস্টকোডবেজ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
উপরের পদ্ধতিটি বাদে আপনি যদি আরো সহজে আপনার এলাকার পোস্ট কোড বের করতে চান তাহলে Postcodebase এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করতে পারেন।
এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশ করার পর Search Postcode লেখাটির নিচে থাকা Division অপশনটিতে আপনার বিভাগ সিলেক্ট করবেন।
এরপর District-এ ক্লিক করে আপনার জেলা সিলেক্ট করবেন।
সবশেষে Sub-district অপশনটিতে প্রেস করে আপনার উপজেলা সিলেক্ট করলেই উক্ত উপজেলায় থাকা আপনার পোস্ট অফিসের পোস্টকোডটি চলে আসবে।
এভাবে আপনারা সহজে উপরের চারটি পদ্ধতি ফলো করে সহজেই নিজের এলাকার পোস্ট কোড বের করতে পারবেন।
পড়ুনঃ গুগল ম্যাপে দিক নির্ণয় করার নিয়ম
উপসংহার
পোস্ট খুঁজে বের করা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিশেষ করে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। কেননা পোস্ট কোড ব্যবহার করে আমরা দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে চিঠিসহ বিভিন্ন পার্সেলের ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারি।
তাই সঠিকভাবে একটি এলাকার পোস্ট কোড কিভাবে বের করবেন সেটি জানা খুবই জরুরী। সাধারণত পোস্ট কোড বের করার জন্য অনেক উপায়ই রয়েছে, যার মধ্য থেকে উপরে আমরা সবচেয়ে সহজ ৪টি পদ্ধতি তুলে ধরেছি।
আর এই চারটি পদ্ধতি যেকোনো এলাকার পোস্ট কোড বের করতে আপনার জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করি।
প্রায়শই জিজ্ঞাসীত প্রশ্নাবলী (FAQs)
পোস্ট কোড কত সংখ্যার হয়?
বাংলাদেশে পোস্ট কোড চার সংখ্যার হয়।
একটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পোস্ট কোড কি আলাদা হতে পারে?
হ্যাঁ, একই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পোস্ট কোড আলাদা হতে পারে। এটি নির্ভর করে সেই উপজেলার বিভিন্ন পোস্ট অফিস বা থানা ভিত্তিক পোস্ট কোড বরাদ্দের উপর। যেমনঃ রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার পোস্ট কোড হচ্ছেঃ ৪৫৩০, আবার কাপ্তাইয়ের অন্তর্ভূক্ত চন্দ্রঘোনা পোস্ট অফিসের পোস্ট কোড হচ্ছেঃ ৪৫৩১